যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এইচআইভি প্রতিরোধে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল। ২০২৫ সালের ১৮ জুন সংস্থাটি অনুমোদন দিয়েছে ‘লেনাক্যাপাভির’ নামের একটি ইনজেকশনকে, যা বছরে মাত্র দুবার গ্রহণ করলেই এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ থেকে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই ওষুধটি বাজারে আসবে ‘Yeztugo’ নামে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেনাক্যাপাভির একটি ‘গেম চেঞ্জার’। এটি বৈশ্বিক এইচআইভি প্রতিরোধে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে ব্যবহৃত ‘প্রি-এক্সপোজার প্রোফিল্যাক্সিস’ বা PrEP ওষুধগুলো প্রতিদিন খেতে হয়, যা অনেকের পক্ষেই নিয়মিতভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। ফলাফল হিসেবে, কার্যকারিতাও কমে যায়। কিন্তু লেনাক্যাপাভির বছরে মাত্র দুইবার ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করলেই দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরভাবে সুরক্ষা দেয়।
দুটি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সিসজেন্ডার নারীদের ক্ষেত্রে লেনাক্যাপাভির শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। একইভাবে সমকামী পুরুষ ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে এর কার্যকারিতা ৯৬ শতাংশ প্রমাণিত হয়েছে।
কোলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত গবেষক ড. ডেভিড হো বলেন, “এইচআইভি প্রতিরোধে লেনাক্যাপাভির ব্যবহার একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি। এটি বৈশ্বিক মহামারিকে থামাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।”
২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় লেনাক্যাপাভির ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, এটি শরীরে দীর্ঘসময় সক্রিয় থেকে ভাইরাসের উৎপাদন চক্রের একাধিক ধাপে বাধা দেয়। সে অভিজ্ঞতা থেকেই প্রতিরোধমূলক ইনজেকশন হিসেবে এর উন্নয়ন ঘটানো হয়।
যদিও এটি টিকা নয়, তবে লেনাক্যাপাভির শরীরে এমনভাবে সক্রিয় থাকে যে, ভাইরাস প্রবেশ করার আগেই তা প্রতিহত করতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি কার্যত টিকার মতোই কাজ করে।
‘গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইচআইভি, টিবি অ্যান্ড ম্যালেরিয়া’-এর সরবরাহ পরিচালক হুই ইয়াং বলেন, “প্রতিরোধমূলক ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ অনেকের জন্য কঠিন। ছয় মাস পরপর একটি ইনজেকশন এই চ্যালেঞ্জ অনেকটাই সহজ করে দেবে।”
তবে সমস্যা হলো, ইনজেকশনটি কেবল স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে প্রয়োগ করা যায় এবং প্রয়োগের আগে প্রতিবারই রোগীর এইচআইভি নেগেটিভ কিনা তা পরীক্ষা করা আবশ্যক। যা উন্নয়নশীল দেশের জন্য জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ।
Gilead এখনো লেনাক্যাপাভিরের দাম ঘোষণা করেনি। তবে সংস্থাটি বলছে, এটি বাজারের অন্যান্য PrEP ওষুধের দামের কাছাকাছি থাকবে। অথচ এই ওষুধের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যাদের, অর্থাৎ নিম্নআয়ের মানুষেরা, তাদের পক্ষে তা কেনা কঠিন হবে।
amfAR-এর সিইও কেভিন ফ্রস্ট সতর্ক করে বলেন, “আমরা হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ওষুধ তৈরি করেছি, কিন্তু যদি বিতরণ ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সেটিও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।”
Gilead ছয়টি জেনেরিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে যাতে ১২০টি স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে royalty-free ভিত্তিতে লেনাক্যাপাভির উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়। কিন্তু USAID ও PEPFAR-এর মতো আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রকল্প সংকুচিত হওয়ায় ওষুধটি আদৌ সেখানে পৌঁছাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।
বিজ্ঞানী, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লেনাক্যাপাভিরকে এইচআইভি প্রতিরোধে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে এর সফলতা নির্ভর করছে বিশ্বজুড়ে এটি সহজলভ্য ও সুলভ মূল্যে পৌঁছানোর ওপর।