
ইউক্রেনের সঙ্গে তিন বছরের যুদ্ধাবস্থার প্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো সরাসরি শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে আয়োজিত এক কৌশলগত নিরাপত্তা সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই প্রস্তাব রাখেন। তার এই বক্তব্যকে আন্তর্জাতিক মহলে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পুতিন বলেন,
“রাশিয়া এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী। আমরা ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সরাসরি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।”
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সংলাপ হয়নি। বহু আন্তর্জাতিক চেষ্টার পরেও শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হয় এবং ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ইউক্রেন সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টারা জানিয়েছেন, অধিকৃত অঞ্চল থেকে রাশিয়ার সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার এবং সার্বভৌম সীমারেখা মেনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত শান্তি আলোচনা বাস্তবসম্মত নয়। তারা রাশিয়ার প্রস্তাবকে ‘সম্ভাব্য কৌশলগত চাল’ হিসেবেও দেখছেন।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন এই প্রস্তাবকে একটি "প্রাথমিক ইতিবাচক পদক্ষেপ" হিসেবে স্বাগত জানালেও, ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জানিয়েছেন—যে কোনো শান্তিচুক্তি হতে হবে ইউক্রেনের পূর্ণ স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা শান্তির পক্ষেই, তবে তা হতে হবে ন্যায়সঙ্গত ও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের পূর্ণ স্বীকৃতির ভিত্তিতে।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের প্রতিরোধমূলক আক্রমণে রাশিয়ার সেনাবাহিনী কৌশলগতভাবে দুর্বল অবস্থানে পড়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশীয় চাপ বাড়ছে পুতিন সরকারের ওপর। ফলে কূটনৈতিক পথ খোঁজার প্রবণতা বেড়েছে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক কৌশল গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক এলিনা গ্রিভ বলেন, “রাশিয়ার এই প্রস্তাব আপাতত একটি কূটনৈতিক পরীক্ষা বলেই মনে হচ্ছে। এটি যুদ্ধক্ষেত্রের চাপে তৈরি হওয়া একটি কৌশলগত প্রয়াস।”
তবে অনেকেই বলছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় দুই দেশই কার্যকর সমঝোতার সম্ভাবনা যাচাই করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।